কেন আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি হবেন।

অন্যান্য যেকোন সরকারী প্রতিষ্ঠান ও সৎ সরকারী চাকুরীজীবীদের (বিসিএস-এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তাসহ) মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সর্বাধিক সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। আসলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোন ব্যাংক নয়, এটি অন্যান্য সকল ব্যাংকের মত মূলধারার ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে জড়িত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিনির্ধারণী কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো এমন সুন্দর নির্বিঘ্ন, চাপমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ কর্মপরিবেশ ও তদবির ও লবিং ছাড়া নিয়োগলাভ ও ঠিক সময়ে দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা অন্য কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানে নেই।

bangladesh-bank

 

#বেতন-ভাতা: একজন সহাকারী পরিচালক তার মূল বেতনের বাইরে প্রতি মাসে মূল সাথে ৬০% হারে বাড়ি ভাড়া, ১,৫০০/- টাকা চিকিৎসা ভাতা, ৪,০০০/- টাকা মধ্যাহ্ন ভোজ ভাতা (প্রতি কর্মদিবসে মধ্যাহ্ন ভোজ ভাতা ২০০/- টাকা, ২০ কর্মদিবস হলে মোট ৪,০০০/- টাকা), ইন্টারনেট বিল ভাতা বাবদ ১,০০০/- টাকা এবং মোবাইল বিল ভাতা বাবদ ৫০০/- টাকা পান। এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে অফিস টাইমের আগে সকালে ও অফিস টাইম শেষে সন্ধ্যার পর overtime করলে এ বাবদ অতিরিক্ত ভাতা প্রদান করা হয়। Overtime করা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।

#অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালকের #মূলবেতন_বেশি: একজন সহকারী পরিচালক মাসিক মূল বেতন (Basic Pay) পান ২২,০০০/- টাকা এবং ১ম শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় মূল বেতনের ৫% হারে একটি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়ে তা দাড়ায় ২৩,১০০/- টাকা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সবকটিতে ১ম শ্রেণীর নম্বর পেলে মূল বেতনের সাথে আরো ৪টি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট (প্রতিটি ইনক্রিমেন্ট মূল বেতনের ৫% হারে) বেশি পান বা যোগ হয়।

 

সহকারী পরিচালক পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা Bangladesh Bank Training Academy (BBTA)-তে ০৬ মাস মেয়াদী একটা Foundation Training বা বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ পান; এই প্রশিক্ষণে ৮০% নম্বর পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মূল বেতনের সাথে আরো একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়। ক্লাসে ও পরীক্ষায় খুব একটা অমনোযোগী না হলে প্রায় সকলেই এই ইনক্রিমেন্ট পান। আবার ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ১ম ও ২য় পর্ব (JAIBB & DAIBB) পরীক্ষায় কোন কর্মকর্তা কৃতকার্য হলে প্রতিটির জন্য তার মূল বেতনের সাথে আরো ০১টি করে ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়। বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে প্রতি ব্যাচে ৬০ জন করে প্রশিক্ষণ পান এবং তাদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা BBTA-তে করা হয়। প্রশিক্ষণকালে তারা পকেট খরচ, বেতন ও ভাতাদি প্রাপ্ত হন।

 

প্রশিক্ষণ শেষে কর্মকর্তারা ব্যাংকের খরচে ১৫ দিন বিদেশ ভ্রমণে যান এবং বিদেশ ভ্রমণ বাবদ প্রায় ১,১০,০০০/- টাকা পান। ০১ বছর শিক্ষানবিশকাল অতিক্রান্ত হলে সকলের চাকুরী স্থায়ী হয় এবং সকলের মূল বেতনের সাথে অতিরিক্ত ০১টি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়।

#বোনাস: একজন সহকারী পরিচালক রোযা ও কোরবানীর ঈদের প্রতিটিতে মূল বেতনের ১০০% হারে ঈদ বোনাস পান। #ইনসেনটিভ_বোনাস: জুলাই মাস শেষে আগের অর্থবছরে কি পরিমাণ ব্যাংক লাভ করেছে তা বিবেচনায় মূল বেতনের ১০০% হারে কমবেশি ৫-৬টা Annual Profit Bonus (Incentive Bonus) প্রাপ্ত হন।

#ঋণ_প্রাপ্তি: চাকুরীর মেয়াদ ০৩ বছর পূর্ণ হলে গৃহনির্মাণ বাবদ বার্ষিক ৫% হারে সুদে ৮০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন এবং চাকুরীর মেয়াদ ০৫ বছর পূর্ণ হলে গাড়ি ক্রয় বাবদ আরো ২০ লাখ টাকা পাবেন। বর্তমানে সরকারী চাকুরীজীবীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহনির্মাণ ও গাড়ি ক্রয় বাবদ ঋণের পরিমাণ আরো ৫০% বৃদ্ধি পেতে পারে।

#ছুটি_সুবিধা: সকল কর্মকর্তা Casual Leave বাবদ বছরে ২০ দিন ছুটি পান। এছাড়া Ordinary Leave সুবিধা আছে। প্রতি ১১ কর্মদিবসের জন্য একজন কর্মকর্তা ১ দিন Ordinary Leave জমা হয়। চাকুরী জীবনে প্রতি ০৩ বছরান্তে একজন কর্মকর্তা Recreation Leave বাবদ ১৫ দিন ছুটি পান। ছুটির সময় সকল বেতন-ভাতা পান এবং মূল বেতনের ১৫০% হারে ভ্রমণ বাবদ ভাতা পান। #চিকিৎসা_সুবিধা: কোন কর্মকর্তা উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগে ভুগলে কিংবা তার কোন বড় ধরনের অপারেশন হলে বা স্ত্রী হাসপাতালে/ক্লিনিকে সন্তান প্রসব করলে এ বাবদ যাবতীয় খরচ ব্যঅংক পুনর্ভরন করে থাকে। #Cooperatives: বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রায় প্রতিটি অফিসে Cooperatives সুবিধা আছে। Cooperatives-এর সদস্য হলে সেখান তেকে স্বল্প সুদে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া যায়। এছাড়া Cooperatives-এর শেয়ার কিনলে বছরান্তে প্রায় ৪০% হারে Dividend দেয় এবং এটা খুবই লাভজনক। যেমন কউ বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রদান কার্যালয়ের Cooperatives—এর সদস্য হলে এবং তার ৪০,০০০/- মূল্যের শেয়ার থাকলে তিনি বছরান্তে ১৬,০০০/- টাকা Dividend পাবেন। #Pension_Gratuity_GPF (General Provident Fund): অন্যান্য সরকারি চাকুরীর মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণকালে পেনশন, গ্রাচুইটি এবং ষাধারণ ভবিষ্য তহবিল খাতে অনেক টাকা পান।

#পদোন্নতি_সুবিধা: বাংলাদেশ ব্যাংকে পদেন্নতির ক্ষেত্রে কোন তদবির, ঘুষ বা স্বজনপ্রীতির সুযোগ নেই। পদোন্নতি ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। একজন সহকারী পরিচালক ৩ থেকে সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে Deputy Director পদে পদোন্নতি পান। এর ৪-৭ বছরের মাতায় Joint Director পদে পদোন্নতি পান। এর ৭-৮ বছরের মাথায় Deputy General Manager (DGM) পদে পদোন্নতি পান। চাকুরী জীবনের শুরু থেকে ২৩-২৭ বছরের মাথায় General Manager (GM) পদে পদোন্নতি পাওয়া যায়।

 

#বিশেষ_সুবিধা: কোন সহকারী পরিচালক যদি বিসিএস যেকোন ক্যাডারে বা অন্য সরকারী চাকুরী পান এবং সেখানে যোগদানে ইচ্ছুক থাকেন সেক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ০১ বছর ছুটি নিতে পারবেন। ঐ কর্মকর্তা যদি তার নতুন কর্ম-প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নিয়ে অসন্তুষ্টিতে থাকেন বা ভাল না লাগে তাহলে তিনি ০১ বছরের মধ্যে যেকোন সময় বাংলাদেশ ব্যঅংকে পুনরায় যোগদান করতে পারবেন এবং এক্ষেত্রে তার জ্যেষ্ঠতার লংঘন হবে না এবং তার অন্যান্য সহকর্মীর মতো যথাসময়ে পদোন্নতি পাবেন।

 

( সংগ্রহীত )